ওয়েব ডেস্ক : সৌদি আরবের (Saudi Arab) সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে পাকিস্তান (Pakistan)। বুধবার সৌদি আরবের মহম্মদ বিন সলমন ও পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট (SMDA) স্বাক্ষরিত করেন। চুক্তির পরে দুই দেশের তরফে জানানো হয়, কোনও এক দেশের উপর হামলা হলে, তা উভয়ের উপর হামলা হিসাবে ধরা হবে। বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, অপারেশন সিঁদুরের (Operation Sindoor) পর সৌদি আরবকে নিজেদের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে পাকিস্তান।
অন্যদিকে এই চুক্তি নিয়ে উঠে আসছে পুরনো প্রেক্ষাপট। তাতেই উঠেছে দুটি শব্দ। একটি হল ‘পেট্রোডলার্স’ (PetroDollars) ও অন্যটি হল ‘ইসলামিক বোমা’ (Islamic Bomb)। পেট্রোডলারস বলতে সেই মার্কিন ডলারগুলোকে বোঝানো হয়, যা তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো অপরিশোধিত তেল বিক্রির মাধ্যমে আয় করে। ১৯৭৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি গোপন চুক্তি হয়। সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল সৌদি আরব তাদের তেল বিক্রির লেনদেন শুধুমাত্র মার্কিন ডলারে করবে এবং সেই অর্থ দিয়ে মার্কিন ট্রেজারি বিল কিনবে। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি রাজপরিবারকে নিরাপত্তা দেবে।
আরও খবর : মার্কিন মুলুকে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হল এক ভারতীয়র!
আর পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তিতে সেই ‘পেট্রোডলার্স'(PetroDollars)-এর বিষয়টি উঠে এল। কারণ, পারমাণবিক কর্মসূচি শুরুর প্রথম থেকেই পাকিস্তানকে আর্থিক সাহায্য করে আসছে সৌদি আরব। ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার পর, পাকিস্তান নিজেদের পারমাণবিক শক্তি প্রদর্শন করেছিল। সেই সময় পশ্চিমের দেশগুলি পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপায়। সেইসময় প্রচুর পরিমাণ তেল দিয়ে পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল সৌদি আরব। যা সেই সময় পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল।
এই বিষয়ে উঠে আসে ‘ইসলামিক বোমা’র (Islamic Bomb) বিষয়টিও। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের হাতে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতীকী শক্তিকে বোঝাতে আন্তর্জাতিক মহলে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল। আর বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চুক্তিটির তাৎপর্য আরও বেশি। কারণ, মুসলিম দেশ গুলির উপর যেভাবে হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েল, তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে সৌদি আরবও। এক্ষেত্রে আমেরিকার ভূমিকাকে নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সৌদি আরব নতুন নিরাপত্তা জাল তৈরি করতে চাইছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
আর পাকিস্তানের (Pakistan) সঙ্গে নতুন এই প্রতিরক্ষা চুক্তি সেই কৌশলেরই অংশ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তবে চুক্তিতে সরাসরি বলা হয়নি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র সৌদি আরবের প্রতিরক্ষায় ব্যবহৃত হবে। কিন্তু, চুক্তির পরে যে বার্তা দেওয়া হয়েছিল দু’দেশের তরফে, তার অন্তর্নিহিত বার্তা একপ্রকার স্পষ্ট। এই চুক্তির ফলে পেট্রোডলার্স আর ইসলামিক বোমার পুরনো সম্পর্ক নতুন প্রতিরক্ষা জোটের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হয়েছে। যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রসঙ্গত, একদিকে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। অন্যদিকে সৌদি আরব-সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির কাছে রয়েছে অর্থের ক্ষমতা। ফলে পাকিস্তান ও সৌদির মধ্যে চুক্তি ভারতের কাছে কিছুটা হলেও মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দেখুন অন্য খবর :